সর্দি কাশি নিবারণের জন্য অমিশ্র সরণি তৈরী করণ

সর্দি কাশি নিবারণের অমিশ্র সরণি নিয়ে আপনারা নানা রকম ভুল ঘরোয়া পরিচর্যা করে থাকেন। যার ফলে হিতে বিপরীত কিছু অবস্থা হয়ে যায়। তাই আজকে আমরা এই অমিশ্র সরণিতে সর্দি কাশি নিরাময়ের সমস্ত কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা করব। 

সর্দি কাশি নিরাময়ের জন্য অমিশ্র সরণিতে আমরা সর্দি কাশি হওয়ার কারণ সমূহ তালিকাভূক্ত করব এবং এর প্রতিকার স্বরূপ কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা আলোচনা করব।

সূচিপত্রঃ সর্দি কাশি নিবারণের অমিশ্র সরণি 




সর্দি কাশি নিবারণের অমিশ্র সরণি 

সর্দি কাশি নিবারণের অমিশ্র সরণি তে জানব যে, ঠান্ডা লাগা, সর্দি-কাশি, ঠান্ডা-কাশি, সর্দি-জ্বর প্রভৃতি মানব শরীরে এমনি এমনি হয় না। এগুলো ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত সংক্রমক রোগ। যা কিনা মানব শরীরে প্রবেশ করে শরীরের উপড়ের শ্বাসপথ তথা নাকে প্রবেশ করে আক্রমণ করে। সর্দি ও কাশি এই রোগে স্বরযন্ত্র, অস্থিগহ্বর এবং গলবিল ব্যপক ভাবে আক্রান্ত হতে পারে। 

ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার ৪৮ ঘন্টা আগে অথবা তার পরেও এর লক্ষণ গুলি ও উপসর্গ গুলি দেখা দিতে পারে। এই রোগের উপসর্গ গুলির মধ্যে রয়েছে গলাব্যাথা, অতি মাত্রায় কাশি, নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া, থাকতে পারে হাঁচি, অথবা থাকতে পারে মাথা ব্যাথা বা বিভিন্ন মাত্রার জ্বর। যা কিনা মানব শরীরকে খুবই দ্রুত দুর্বল করে তোলে।

আরও পড়ুনঃ শুষ্ক কাশি নিরাময়ে করণীয়

এই ধরনের ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত ব্যক্তি সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ্য হওয়ার জন্য- তার আক্রান্ত হওয়ার দিন থেকে শুরু করে প্রায় ৭ দিন - ১০ দিনের মত মময় নিয়ে থাকে। এছাড়া এই রোগের কিছু ভিন্ন উপসর্গ রয়েছে যা আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ২১ দিন বা ৩ সপ্তাহের মত অবস্থান করে থাকে। উক্ত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি অন্য কোন রোগে আক্রান্ত থাকে, আর এই ঠান্ডা,জ্বর বা কাশি যদি না কমে তাহলে তা নিউমোনিয়া বা ফুসফুস প্রদাহের দিকে যেতে পারে। 

সর্দি কাশির ভাইরাসের নাম ও সংক্রামণ 

সর্দি কাশি নিবারণের অমিশ্র সরণি তে বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য যে, বর্তমান সময় পর্যন্ত যেগুলি ভাইরাস সর্দি,কাশি এবং জ্বর সৃষ্টি করে তাদের সংখ্যা প্রায় দুইশত ছাড়িয়ে গেছে। তবে এই শতাধিক ভাইরাসের প্রত্যেকটিই কিন্তু খুব বেশী পরিলক্ষিত হয় না। এই ভাইরাস গুলির মধ্যে সবথেকে বেশী পরিলক্ষিত হয়- "রাইনোভাইরাস" বা "নাসাভাইরাস"।   

"রাইনোভাইরাস" একটি বাতাস দ্বারা বাহিত রোগ। এই ভাইরাস সাধারণত বাতাসে ভেসে বেড়ায়। তাই এই ভাইরাস বাতাস দ্বারা বাহিত হয়ে মানব শরীরে প্রবেশ করে এবং খুবই সহজে কোন ব্যক্তিকে আক্রান্ত করে ফেলে। আবার এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে অন্য কোন ব্যক্তির শরীরে সহজেই প্রবেশ করে এবং একসাথে অনেক ব্যাক্তিকে আক্রান্ত করে ফেলতে পারে বা অনেকের মাঝে দ্রুত ছড়াতে পারে। 

এই রোগে আক্রান্ত রোগী চলাফেরা করার সময় কোন কিছু হাত দিয়ে ধরে ফেলে তখন তার রোগাক্রান্ত হাতের স্পর্শে ঐ স্থানে উক্ত ভাইরাস থেকে যায় এবং সেই স্থান ভাইরাস দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এর পরবর্তিতে কোন ব্যক্তি যদি সেখানে তার শরীরের কোন অংশ স্পর্শ করে থাকে তবে সেই ব্যক্তিও  সেই রাইনোভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। 

রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ 

সর্দি কাশি নিবারণের অমিশ্র সরণি তে আমরা সর্দি কাশি রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ হিসেবে উল্লেখ করতে পারি যে, এই রোগের বিভিন্ন লক্ষণ গুলির মধ্যে হাঁচি,কাশি এবং সর্দি তাছাড়া গলা ব্যাথা, মাথা ব্যথা, হাতের মাংস পেশীতে ব্যাথা, শারীরিক অবসাদ, শরীর দুর্বল এবং ক্ষুধা থাকেনা বললেই হয়। এই ভাইরাসের কারণে শরীরের ভারসাম্য অনেকাংশে হ্রাস পায়। 

এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির গলায় সামান্য পরিমাণে কালশিটে দেখা যায়। তাছাড়া দীর্ঘক্ষণ কাশি পরিলক্ষিত হয় ও হাতের দুই পেশীতে প্রচুর পরিমাণে ব্যাথা হয় এবং তা দীর্ঘ সময় থাকে। রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি প্রাপ্ত বয়স্ক হয় তবে তার শরীরে জ্বর থাকতেও পারে অথবা নাও থাকতে পারে। আবার এই একই রোগ যদি বৃদ্ধ বা শিশুর ক্ষেত্রে হয়ে  থাকে তাহলে তাদের শরীরে জ্বরের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়।

কাশির তুলনায় ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি কঠিন ব্যাপার, কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা থেকে সর্দি খুবই সাধারণ এবং সহজ ও সহনীয়। কাশি ও জ্বর নিদ্দিষ্ট সময়ের ভেতরে না কমলে সেইটা প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ এলার্জি থেকে মুক্তির উপায়



সর্দি কাশির জন্য টিকা 

অন্য বিভিন্ন রোগের জন্য বিভিন্ন করকমের টিকা আবিষ্কার হয়েছে। যদি কোন রোগের প্রাদুর্ভাব খুব সহজে না কমে তাহলে সেই রোগের জন্য টিকা খুবই প্রোজনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ যখন কোন রোগের প্রাদুর্ভাব খুবই প্রবল শক্তিতে বিস্তার করে চলে, তখন তার লাগাম টেনে ধরে রাখতে টিকার ব্যবহার করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত সর্দি বা কাশির জন্য কোন টিকা আবিষ্কার করা হয়নি বা এর প্রয়োজন নেই বললেই চলে। 

সর্দি ও কাশির চিকিৎসা

অমিশ্র সরণিতে সর্দি কাশি নিবারণের জন্য বিশেষ ভাবে বর্ণনা করা যেতে পারে যে, সর্দি বা কাশির জন্য কোন চিকিৎসা বা কোন ঔষধ নেই। তবে এই রোগের উপসর্গের প্রশমন করা যেতেই পারে। 

এই রোগকে প্রতিরোধের জন্য প্রধান প্রধান বিষয় গুলো হলো- নিজেকে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। এক কথায় শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন হাত পরিষ্কার রাখতে হবে, হাত, মুখ, চোখ ও নাকে হাত দেওয়ার আগে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে।

এতকিছুর পরেও একটু আস্বাসের বিষয় হলো যে, এই রোগের জন্য যেই যৎ সামান্য ঔষধ রয়েছে তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করলে ১ দিনের ভেতরে দারুন রেজাল্ট পাওয়া সম্ভব।  তবে এই রোগের জন্য কোন রকম স্টেরয়েড দেওয়া উচিৎ নয়, বরং আইব্রুপ্রফেন দেওয়া যেতে পারে এবং এন্টিবায়োটিক কোন ভাবেই খাওয়া যাবে না। 

সর্দি কাশির ঘরোয়া খাবারের তালিকা

  • সর্দি কাশির সমস্যা নিরাময়ে অমিশ্র সরণিতে বর্ণিত করা যায় যে, কিছু কিছু খাবার খেলে খুবই তাড়াতাড়ি আরোগ্য লাভ করা যায়। যেই সমস্ত খাবার খেলে তাড়াতাড়ি আরোগ্য লাভ হয় সেগুলো হলো-
  • খাবারের সময় সরিষা বা কালিজিরা অথবা এসবের তৈরী খাবার খাওয়া।
  • খাবার খাওয়ার সময় আমরা যদি সরিষার তেল দিয়ে আলু, টমাটো, করলা সিদ্ধ প্রভৃতি খাবার মাখিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
  • কালোজিরা খাওয়া যেতে পারে।
  • সরিষা শাক বেশ উপকারী। যা ফুসফুসের স্বাভাবিক কাজে সহায়তা করে। তাছাড়া নাক বন্ধ হয়ে গেলে সরিষার তেল দারুন কাজ করে।
  • সর্দি কাশি নিবারণে অমিশ্র সরণি তে উল্লেখ্য যে, সর্দি কাশি থেকে আরোগ্যের জন্য প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, ভিটামিন এ, মিষ্টি কুমড়ার বিচি এবং আলু দিয়ে তৈরী খাবার গুলো খাওয়া যেতে পারে।
  • তুলসী পাতা সর্দি বা কাশির জন্য সব থেকে কার্যকরী। প্রতিদিন সকালে তুলসী পাতার রস সেবন করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • খাদ্য তালিকায় মাল্টা,পেয়ারা এবং টক জাতীয় খাবার খেলে সর্দি কাশি কমে।
  • সর্দি কাশিতে ঘরোয়া পানীয় পান করা

আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যাঁরা খুবই সকালে বা ভোরে ঘুম থকে উঠে। আর এই সময় উঠার জন্য অনেকের ঠান্ডা বা কাশি অথবা সর্দি লাগতে পারে। তাই অমিশ্র সরণি অনুযায়ী সর্দি কাশি নিবারণে কিছু ঘরোয়া পানি পান করা যেতে পারে।

  • গরম পানির সাথে আদা মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
  • গরম চা এর সাথে আদা যুক্ত করে খাওয়া
  • চা বা কফির না খেয়ে আদা চা খাওয়া
  • কুসুম কুসুম গরম পানির সাথে লেবুবা মধু মিশিয়ে খাওয়া
  • এবং পরিশেষে -
  • মসলা চায়ের সাথে পুদিনা পাতা মিশিয়ে খাওয়া।
উপরিউক্ত বিষয়ের দিকে নজর দিয়ে চললে সর্দি কাশি থেকে অবশ্যই মুক্তি মিলবে বা ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। 

সর্দি কাশি উপশমে বর্তমান সমীক্ষা

সর্দি কাশি নিবারণের অমিশ্র সরণি তে আমরা সকলের উদ্দেশ্যে বলতে পারি যে, বর্তমান সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বেশ কিছু নিয়ম মেনে চললে সর্দি বা কাশিতে আরও কার্যকরী ফল পেতে পারেন। সেগুলো হলো-

  • ড্রপ দিয়ে নাক ভালোভাবে পরিষ্কার করা
  • পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা
  • নাকের ভেতরে সর্দি আটকিয়ে না রাখা
  • কপালে এবং নাকে গরম সেঁক দেওয়া
  • মেনথল ব্যবহার করা
  • কুসুম কুসুম গরম পানিতে স্নান করা।
  • এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ খাওয়া
পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নেওয়া 

সর্দি কাশি হলে মানুষের জন্য বিশ্রাম নেওয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঠান্ডা বা সর্দি লাগলে "রাইনোভাইরাস" নামে এক ধরনের ভাইরাসের কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তখন মানুষের শরীরের ভারসাম্য অনেকটা হ্রাস পায়। তাই সর্দি কাশি নিবারণের অমিশ্র সরণি তে আমরা বর্ণিত করতে পারি যে, যেহেতু বিশ্রাম নিলে সর্দি কাশির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায় সেই হেতু এই সময়টাতে বিশ্রাম নেওয়াইরযুক্তি যুক্ত হবে।

আরও পড়ুনঃ কাশি ও বুকে ব্যাথার ঘরোয়া পরিচর্যা

শেষ কথা

সর্দি কাশি নিবারণের অমিশ্র সরণি এর শেষ কথা হিসেবে বলতে চাই যে, সর্দি কাশি বা জ্বর থেকে সহজে উপশম পাওয়ার জন্য উপড়িউক্ত ঘরোয়া প্রতিকার গুলো আপনাকে সুস্থ্য হতে বা দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে দারনভাবে সহায়তা করবে।  তবে এর পাশাপাশি আরও বলতে চাই যে, এই সমস্ত ঘরোয়া পরিচর্যার দ্বারা যদি আপনি সুস্থ্য না হন অথবা আপনার সর্দি কাশির লক্ষণ গুলির স্থায়িত্ব ৭ থেকে ১০ দিনের বেশী হয়ে যায়, তাহলে আপনি আর দেরী না করে আপনার নিকটস্থ এলাকার ভালো কোন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক এর পরামর্শ গ্রহণ করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url