গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে তার কিছু উপায়

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এটা সকলের জেনে রাখা উচিৎ। কারণ যখন একজন মা গর্ভধারণ করেন, তখন তার নিজের এবং গর্ভে থাকা বাচ্চাকে জন্য দুর্গম একটা পথ অতিক্রম করতে 

গর্ভাবস্থায়-হিমোগ্লোবিন-বাড়ে-কোন-খাবারে

হয়। সে জন্য অন্তঃসত্ত্বা মা ও তার গর্ভে থাকা বাচ্চার সুস্থ্যতার জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিৎ করতে হবে। এই সময় একজন অন্তঃসত্ত্বা মা যেসম্ত সমস্যার মুখোমুখি হবেন তার মধ্যে অন্যতম হলো হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া। 

সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে 

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে 

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এটা হয়তো সকলেই জানে না। কিন্তু সকলের জানা উচিৎ কোন কোন খাবার খেলে গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে, কি কি অবহেলার কারণে গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন কমে, হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার ফলে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের কি কি সমস্যা দেখা দিতে পারে ইত্যাদি। একজন অন্তঃসত্ত্বা মা তার গর্ভাবস্থায় নানা রকমের ভুল বা কিছু অনিয়ম করে থাকেন। যেগুলোর কারণে তার এবং বাচ্চার উভয়ের উপড় একটা প্রভাব পড়তে পারে।

সেই জন্য গর্ভাবস্থায় প্রতিটি অন্তঃসত্ত্বা মাকে ব্যাপক ভাবে সতর্ক থাকতে হবে। গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েরা ছোট ছোট ভুল বা কিছু অনিয়ম করে ফেলেন অলসতার কারণে।  যেটা তাদের জন্য মোটেও কাম্য নয়। ছোট ছোট ভুলের কারণে বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। যার ফলস্বরুপ অন্তঃসত্ত্বা মা বা তার গর্ভের সন্তানের কোন ক্ষতি সাধন হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা মা ও তার বাচ্চা যেন সুস্থ্য থাকে এবং কিভাবে হিমোগ্লোবিন বাড়বে সেই সম্পর্কে আজ আমরা আলোচনা করবো।

হিমোগ্লোবিন সম্পর্কে জানেন কি

হিমোগ্লোবিন হলো মেরুদন্ডী প্রাণির লোহিত রক্ত কণিকায় থাকা লৌহযুক্ত একটি মেটালোপ্রটিন। আরও বলা যায় যে, এই হিমোগ্লোবিন একটি অক্সিজেন পরিবাহী প্রোটিন। আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অক্সিজেন পৌঁছায় তার মূল কারণে থাকে এই হিমোগ্লোবিন। হিমোগ্লোবিন না থাকলে শরীরের কোন অঙ্গেই অক্সিজেন পৌঁছাতে পারবে না। মানব শরীরে হিমোগ্লোবিনের প্রোটিন এর পরিমাণ একটি বিষেশ মাত্রায় থাকে। 


সেইটা নির্ভর করে লোহিত রক্ত কোণিকার উপড়। হিমোগ্লোবিনে লোহিত রক্ত কোণিকার সমগ্র শুষ্ক ওজনের প্রায় ৯৭% প্রোটিন হয়ে থাকে। মানব শরীরে জলসহ এর পরিমাণ প্রায় ৩৫% হয়ে থাকে। হিমোগ্লোবিন ফুসফুস থেকে কিছু পরিমাণ অক্সিজেন নিয়ে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন কোষের জন্য তা উন্মূক্ত করে দেয়। তাছাড়া হিমোগ্লোবিন অক্সিজেন পরিবহনের পাশাপাশি কোষের কলা থেকে কার্বণ ডাইঅক্সাইড পরিবহণ করে ফুসফুস পর্যন্ত নিয়ে যেতে সাহায্য করে। 
মানুষের শরীর ভেদে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণও কম বা বেশী হয়ে থাকে। যেমন একজন পুরুষের শরীরের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা একটু বেশী থাকে আবার একজন মহিলা মানুষের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকে। পরুষের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ডেসিলিটারে ১৩.৫-১৭.৫ গ্রাম এবং একটি মহিলার শরীরে সেইটা থাকে ১২.৫-১৬.৫ গ্রাম পর্যন্ত। 

আয়রন জাতীয় খাবার খাওয়া

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে এটা জানতে হলে আয়রন জাতীয় খাবারের কথা আসবে সবার প্রথমে।  কেননা একজন অন্তঃসত্ত্বা মায়ের শরীরে যদি হিমোগ্লোবিন কমে যায় তখন অন্তঃসত্ত্বা মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়ানের জন্য আয়রণ জাতীয় খাবারের কোন জুড়ি নেই। শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে নানা রকমের অসুখের লক্ষণ দেখা দেয় যেমন- মাথাব্যাথা, মাথা ঘোরা, রক্তশূন্যতা,দুর্বলতা, অসস্তি ভাব বা বিরক্তি ভাব প্রভৃতি। চলুন কোনগুলো আয়রন যুক্ত খাবার সেই সম্পর্কে জেনে নিই। 

ফল জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা একজন অন্তঃসত্ত্বা মায়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। উদ্ভিজ্জ আয়রনের বিশাল ক্ষেত্র হলো ফলমূল। এই ফলমূলে থাকা আয়রন অতি সহজেই অন্তঃসত্ত্বা মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। ডালিম, কমলালেবু,আপেল,কলা,খেজুর জলপাই এবং তুঁত ফলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন থাকে। এগুলো ফল একজন অন্তঃসত্ত্বা মা খেলে একদিকে তার শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়বে এবং বাচ্চাও ভালো থাকবে। 


আয়রন জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি, যা গর্ভবতী মায়ের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া রয়েছে বাদাম জাতীয় খাবার, রয়েছে শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি, সয়াবিন, ব্রকলি, যেসব প্রাকৃতিক উপায়ে সরাসরি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। তাছাড়া গর্ভবতী মায়ের জন্য হিমোগ্লোবিনের চাহিদা পূরণ হবে শিং মাছ, শোল মাছ, ট্যাংরা মাছ প্রভৃতি থেকে। আবার হিমোগ্লোবিনের জন্য প্রাণীজ উৎসের মধ্যে অন্যতম হলো ডিম,মাংস প্রভৃতি। 

বিভিন্ন ফলমূল খাওয়া

গর্ভবতী মায়ের শরীরে যখন হিমোগ্লোবিন কমে যায় তখন তাদের উচিৎ হিমোগ্লোবিন উৎপাদনকারী বিভিন্ন ধরনের ফলমূল খাওয়া। কেননা ফলমূল মানব শরীরে হিমোগ্লোবিন সৃষ্টিতে দারুন ভূমিকা পালন করে। কিছু ফলে প্রচুর আয়রন থাকে আবার কিছু ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে আর কিছু ফলে আয়রন এবং ভিটামিন সি দুটো একসাথেই পাওয়া যায়। কোন কোন ফলে আয়রন, ভিটামিন সি পাওয়া যায় সেগুলোই এখন আমরা জানবো।
গর্ভাবস্থায়-হিমোগ্লোবিন-বাড়ে-কোন-খাবারে

আপেল হলো একটি আয়রন সমৃদ্ধ ফল। যা গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিন সৃষ্টিতে সাহায্য করে। আবার ডালিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।  যা হিমোগ্লোবিনের অন্যতম এক উপাদান। ডালিমে আয়রন ও ভিটামিন সি সবই পাওয়া যায়। তরমুজ একটি পানি জাতীয় ফল। যার মাঝে আয়রন ও ভিটামিন সি উভয়ই পরিলক্ষিত।  আবার খেজুরে আয়রন ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন রকমের পুষ্টি। যা গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই প্রয়োজন। এছাড়াও রয়েছে কমলা, রেবু, পেয়ারা প্রভৃতি।

সবুজ শাক-সবজি খাওয়া

সবুজ শাক-সবজি একজন অন্তঃসত্ত্বা মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধির জন্য খুবই উপযোগী এবং দরকাী খাবার।শাক সবজিতে যে পরিমান ভিটামিন,খনিজ ও আয়রন রয়েছে তা মানব শরীরের জন্য পুষ্টির এক বিশাল ভান্ডার। শাক সবজিতে ভিটামিন, খনিজ ও আয়রন ছাড়াও থাকে ক্যান্সার ধ্বংসকারী রাফেজ, শর্করা,ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম,পটাশিয়াম প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদান। যেগুলো খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা তো বাড়বেই সেই সাথে বাচ্চার কোন পুষ্টির অভাব হবে না।

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে? এই প্রশ্নের আরকেটি উত্তর হলো শাক সবজি। কেননা সবুজ শাক সবজিতে গর্ভবতী মায়ের জন্য সমস্ত পুষ্টিই একত্রে পাওয়া যায়। যেমন-পালং শাকে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং রয়েছে ম্যাগনেসিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন উপাদান। তাছাড়া পুঁইশাক ভিটামিনের উৎস হিসেবে কম নয়। যা গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিনের চাহিদা পূরণ করতে দারুন কার্যকরী।

পুঁইশাকে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং প্রচুর পরবমাণে ক্যালসিয়াম। তাছাড়া কলমি শাকও আছে এই লাইনের শীর্ষে। গর্ভবতী মায়ের জন্য কলমি শাকের ভূমিকা অপরিহার্য। কলমি শাক ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, এবং আয়রন দিয়ে ভরপুর থাকে। আবার মেথি শাক আপনারা অনেকেই চিনেন। যা কিনা গর্ভবতী মায়ের শরীরে পুষ্টি বৃদ্ধির জন্য গভীর ভাবে যুক্ত। মেথি শাক সম্পূর্ণটাই বিভিন্ন  প্রাকৃতিক গুণাগুণে গুনান্বিত। পুষ্টিগুণ দিয়ে যার তুলনা করলে খুবই কম হয়ে যাবে।

মেথি শাকে থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন এ ইত্যাদি। এসব শাকের পাশাপাশি তালিকার অন্যতম স্থানে রয়েছে সরিষা শাক। বাংলায় জন্ম নিয়েছেন অথচ সরিষা শাক চিনেন না এমন কেউ নাই। সকলেই সরিষা শাককে চিনে থাকবেন। সরিষা শাকে অবস্থিত পুষ্টি উপাদান গর্ভবতী মায়ের জন্য অপরিহার্য। সরিষা শাক গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণে ব্যাপক ভাবে সাহায্য করে। সরিষা শাকে থাকে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, আয়রন এবং ক্যালসিয়াম।


সবুজ শাক সবজি কেবল গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়ায় তা না এমন কিছু আঁশ জাতীয় শাক-সবজি আছে যা ক্যান্সারের জীবানুকে ধ্বংস করতে পারে। এমনি এক সবজির নাম হলো বাঁধাকপি বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে এবং অন্যান্ন ভিটামিন বা পুৃষ্টি উপাদান। তাছাড়া রয়েছে লেটুস পাতা, যা আমরা সালাদ বা শাক হিসেবেও ব্যবহার করে থাকি। লেটুস পাতায় প্রচুর ফোলেট, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকে।

ডাল বা মটরশুঁটি জাতীয় খাবার খাওয়া

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে? এর প্রত্তুত্বরে আপনি নিশ্চিন্তে ডাল এবং মটরশুঁটির কথা বলতে পারেন। কারণ গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের হিমোগ্লোবিন কমে গেলে তিনি যদি ডাল ও মটরশুঁটি নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে তার শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাব নিমিষেই পূর্ণ হয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। কেননা ডাল এবং মটরশুঁটিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন ও ফাইবার পাওয়া যায়। আর এই ডালে এবং মটরশুঁটিতে যে পরিমাণ প্রোটিন ও ফাইবার রয়েছে তার সম পরিমাণ আর কিছুতেই পাওয়া যায় না।
গর্ভাবস্থায়-হিমোগ্লোবিন-বাড়ে-কোন-খাবারে

ডাল জাতীয় খাবার হলো প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ শিম জাতীয় উদ্ভিদের একটি অংশ বিশেষ। অন্যভাবে বলতে গেলে ডাল বিভিন্ন লেগিউম জাতীয় গাছ থেকে ফল হিসেবে সৃষ্টি হয়। আর সেই লেগিউম জাতীয় ফলকে শুকিয়ে বীজ বানানো হয়। এই বীজগুলিকেই পরবর্তীতে ডাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লেগিউমম জাতীয় শুকনো বীজ বিভিন্ন রকমের ডাল হিসেবে পরিচিত। যেমন- মসুর ডাল,মুগ ডাল,ছোলার ডাল প্রভৃতি গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। 

মটরশুঁটি জাতীয় ডাল জাতীয় খাবার। এই মটরশুঁটি একটি লেগিউম জাতীয় একটি গাছের বীজ। লেগিউম জাতীয় গাছের এই ধরনের বীজকে মটর নামে পরিচিত। এই মটর বীজ গর্ভবতী মায়ের জন্য অতীব প্রয়োজনীয়। এই মটরশুঁটি খাওয়ার জন্য গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বজায় থাকে এবং বাচ্চার পুষ্টি গ্রহণের জন্য কোন তারতম্য হয় না। গর্ভবতী মায়ের মাথাঘোরা,মাথাব্যাথা প্রভৃতি রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যায়।

চর্বিহীন মাংস জাতীয় খাবার

গর্ভবতী মায়ের শরীরে যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা একে বারেই কমে যায় তখন সেটা বৃদ্ধির জন্য চর্বিহীন মাংসের গুরুত্ব অপরসীম। কারণ চর্বিহীন মাংস গর্ভবতী মায়ের প্রোটিনের সবথেকে ভালো একটা উৎস। তাছাড়া গর্ভবতী মায়ের শরীর ঠিক রাখার জন্য এই ধরণের মাংসের কোন তুলনা নেই। গর্ভবতী মায়ের জন্য চর্বিহীন মাংস পছন্দ করবেন এভাবে- যে, মাংসে মোটা চর্বি কম থাকবে ও কোলেস্টেরল কম থাকবে এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটও কম থাকবে। এগুলো দেখে মাংস সংগ্রহ করা খুবই বাঞ্ছনীয়।

গর্ভবতী মায়ের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে তা পূরণ করার জন্য সেরা একটা মাংসের তালিকায় আসতে পারে মুরগীর মাংস। মুরগীর রান বা বুকের মাংসে চর্বি থাকে না বললেই চলে। সেই জন্য এখানকার মাংস গর্ভবতীদের হিমোগ্লোবিনের চাহিদা পূরণ করতে খুবই কার্যকরী। মুরগীর মাংসের ন্যায় হাঁসের মাংসও হিমোগ্লোবিনের মাত্রাকে বাড়িয়ে তুলে। গর্ভবতী মায়ের হিমোগ্লোবিন বাড়াতে মুরগীর শরীরের ন্যায় হাঁসের শরীরের সেই একই অংশ থেকে মাংস খেতে হবে।

মাছ জাতীয় খাবার খাওয়া

মাছ হলো অনন্য পুষ্টিকর খাবার। অন্তঃসত্ত্বা মায়ের শরীরে যদি হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় তখন গর্ভবতী মায়ের উচিৎ প্রচুর পরিমাণে মাছ খাওয়া। মাছের প্রজাতির মধ্যে অনেক প্রজাতির মাছ দেখা যায় যেসব কেবল হিমোগ্লোবিন কে ও শরীরে আয়রন বৃদ্ধি করে থাকে। তাছাড়া এভাবেও বলা যায় যে, মাছে ভিটামিন এ, বিটামিন বি, ভিটামিন বি১২, তামা, আয়রন, প্রোজনীয় ফ্যাটি এসিড প্রভৃতি থাকে। 

যেসমস্ত মাছ গর্ভবতী মা দের বেশী পরিমাণে প্রয়োজন সেগুলোর মধ্যে আছে- চিংড়ি মাছ, ম্যাকরেল মাছ, সার্ডিন মাছ প্রভৃতি। গর্ভবতী মাদের হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য এসব মাছ প্রতিদিন খাবারের তালিকায় রাখা দরকার। তবে খুব বেশী পরিমাণ খাবারের পূর্বে ডাক্তারে থেকে জেনে নেওয়া উচিৎ। 

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া

মানুষের শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে তা একটি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হিমোগ্লোবিন কিন্তু বিভিন্ন কারণে কমে যেতে পারে। তার মধ্যে "ভিটামিন সি" অন্যতম। যদি গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যায় তখন তার শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে আয়রনের প্রয়োজন পড়ে। গর্ভবতী মা যদি হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য কেবল আয়রন গ্রহণ করে তবে কিন্তু সেইটা কাজ করবে না। কেননা "ভিটামিন সি" ছাড়া মানুষের শরীরে আয়রন কোন কাজে আসবে না।

সেই জন্য গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর জন্য যেমন আয়রনের প্রয়োজন তেমনি ভিটামিন সি এর প্রয়োজনও সমান। বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে ভিটামিন সি পাওয়া যেতে পারে। যেসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যেতে পারে সেগুলো হলো- ফুলকপি, কমলা, লেবু,পেঁপে,গোলমরিচ, আঙ্গুর, টমাটো প্রভৃতিতে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। 
শুকনো ফল জাতীয় খাবার
গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করতে কিছু কিছু শুকনো ফল খাওয়া অতীব জরুরী। কিছু কিছু শুকনো ফলে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে যা হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে। এসমস্ত শুকনো ফলগুলো হলো- খেজুর, পেস্তা, কিসমিস এবং আখরেট ইত্যাদি।

বাদাম জাতীয় খাবার

বাদাম শরীরে আয়রন উৎপাদনে ব্যাপক পারদর্শি একটি খাবার। বাদামে আছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ই, ফ্যাট প্রভৃতি। বাদাম জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে- তিসির বীজ, আখরেট, কুমড়ো বীজ, সাধারণ বাদাম ইত্যাদি। এসব খাবার গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাতা বাড়িয়ে তুলবে।

ডিমের কুসুম

ডিমের কুসুম হলো হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য এক অপরিহার্য খাবার। গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে নিয়মিত ডিমের কুসুম খেলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। ডিমের কুসুমে থাকা আয়রন হিমোগ্লোবিন তৈরীতে দারুন ভূমিকা রাখে। 

ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার

ফলিক এসিড মানুষের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরীতে বা লাল রক্ত তৈরীতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলিক এসিড পাওয়া যায় ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর ভেতরে। আবার বলা যায় ফলিক এসিড ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স এর একটি অংশ। বাদাম, কলা, শিমের বিচি, সবুজ পাতা যুক্ত সবজি এবং ফুলকপিতে ফলিক এসিড পাওয়া যায়। আর এই ফলিক এসিড গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিন তৈরী করতে বিশেষ দায়িত্ব পালন করে। 

শেষ কথা

গর্ভাবস্থায় হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আজ আমরা ব্যাপক ভাবে আলোচনা করেছি। যার দরুন যদি কোন গর্ভবতী মায়ের শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় তাহলে সর্বপ্রথম উপরিউক্ত বিষয়ে ঘরোয়া ভাবে পরিচর্যা করতে হবে। আমি আশা করবো যে কোন গর্ভবতী মায়ের যদি হিমোগ্লোবিন কমে যায় তাহলে উপড়ি উক্ত বিষয়গুলি যদি তিনি মেনে চলেন তাহলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা পূর্ণ করা সম্ভব। তারপরেও যদি হিমোগ্লোবিন না বাড়ে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url